হার্ড ইমিউনিটির কত কথা

Indranil Majumder

Indranil Majumder

14 February 2021 · 3 min read

হার্ড ইমিউনিটির কত কথা

                                →ইন্দ্রনীল মজুমদার



আমরা এই করোনাকালে যে সমস্ত নিত্যনতুন বৈজ্ঞানিক পরিভাষা শুনছি তাদের মধ্যে হার্ড ইমিউনিটি(Herd immunity)’ অন্যতম। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যাঁরা এই শব্দটির মানে বা কিসের জন্যে হার্ড ইমিউনিটি তা না বুঝেনা জেনে অনবরত এই শব্দটি ব্যবহার করে থাকেনএমনকি বক্তৃতাও দিয়ে বসেন। ভাগ্যিস এই শব্দটির উচ্চারণ কঠিন নয়। নয়তো অনেক কিছুই ঘটত। যাইহোকআমরা এবার জেনে নিই এই হার্ড ইমিউনিটি সম্পর্কে দু-চার কথা। আমরা জেনে নেব হার্ড ইমিউনিটি কিকরোনা মহামারীর ক্ষেত্রে এর ভূমিকা কেমনভারতে কি আদৌ সম্ভব হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করা?


হার্ড ইমিউনিটি


হার্ড ইমিউনিটি কথাটি ভাঙলে দুটি শব্দ পাই– ‛হার্ড(herd)’ ও ইমিউনিটি(immunity)’। এখানে হার্ড’ কথাটির অর্থ জনগোষ্ঠী’ এবং ইমিউনিটি’ কথাটির মানে রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা। এই হার্ড ইমিউনিটিকে হার্ড প্রোটেকশন (Herd protection)’ নামেও ডাকা হয়ে থাকে। বাংলা যদি এর  পরিভাষা করা যায় তবে তা দাঁড়ায় সম্প্রদায়ব্যাপী অনাক্রম‍্যতা’ বা  ‛সম্প্রদায়ব‍্যাপি প্রতিরক্ষা। যখন টিকা (vaccine) বা ওষুধ (medicine)-এর অভাব সত্ত্বেও যখন সমাজের বেশিরভাগ মানুষের শরীরে কোনো বিশেষ সংক্রামক রোগ বা জীবাণুর(এখনকার ক্ষেত্রে করোনা ভাইরাসের) বিরুদ্ধে লড়ার ক্ষমতা তৈরি হয়ে যায়যার সুবিধা জনগোষ্ঠীর বাকিরাও লাভ করতে পারে শুরু করেন তখন তাকে হার্ড ইমিউনিটি বলে। ভ‍্যাকসিন বা সংক্রমনের মাধ্যমে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হয়। অর্থাৎ মোদ্দা কথাসমাজের বেশিরভাগ মানুষের শরীরে যখন কোনো বিশেষ ভাইরাসজীবাণু বা সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা জন্মায় বা তৈরি হয় এবং সমাজের বাকি অংশও তার সুফল লাভ করেতখন তাকে হার্ড ইমিউনিটি বলে।



করোনা ও হার্ড ইমিউনিটি


এখনোও করোনার ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক যেহেতু আবিষ্কৃত হয়নি তাই অনেক বিশেষজ্ঞের মতে করোনা থেকে মুক্তি পাওয়ার পথ হল হার্ড ইমিউনিটি। অর্থাৎসংক্রমণের মাধ্যমেই সমাজে তৈরি হবে হার্ড ইমিউনিটি। করোনার ক্ষেত্রেহার্ড ইমিউনিটি প্রতিষ্ঠার জন্যে সমাজের অত্যন্ত ৭০% মানুষকে করোনায় আক্রান্ত হতে হবে। এই ৭০% মানুষের শরীরে পর্যাপ্ত করোনার অ্যান্টিবডি তৈরি হলেবাকি ৩০% সমাজের মানুষও নিরাপদ। করোনার ভ্যাকসিন বাজারে না আসা অবধি উন্নত দেশগুলির ভরসা কিন্তু এই হার্ড ইমিউনিটিতেই। এই উন্নত দেশগুলির মধ্যে আছে আমেরিকাইংল্যান্ডইতালিসুইডেন ইত্যাদি।



ভারতে হার্ড ইমিউনিটি


জনবহুল ও উন্নতির পথিক আমাদের ভারতবর্ষ কিন্তু ওই উক্ত উন্নত দেশগুলির পথে হাঁটেনি। অর্থাৎহার্ড ইমিউনিটির পথে হাঁটেনি আমাদের দেশ। এখানে দীর্ঘ লকডাউনের পর এখন আনলক পক্রিয়া আস্তে আস্তে চালু হচ্ছে। তবেজানিয়ে রাখা ভালো যে ভারতবর্ষে হার্ড ইমিউনিটি অনেকটা সোনার পাথর-বাটি’-র মতো অবাস্তব ও অসম্ভব। কেনএর উত্তরে বিষয়টি বুঝিয়ে দেওয়া যাক। ভারতের বর্তমান জনসংখ্যা ১৩৫.২৬ কোটি বা বলা ভালো ১৩৫ কোটিরও বেশি। এবারএ দেশে যদি হার্ড ইমিউনিটি তৈরি করতে হয়তবে ৭০% মানুষকে করোনায় আক্রান্ত হতে হবে। অর্থাৎ প্রায় ৯৫ কোটি মানুষকে করোনায় আক্রান্ত হতে হবে। আরে বাপরে! অত মানুষ আক্রান্ত হলে যাবে কোথায়?  হাসপাতালে পর্যাপ্ত বেড আছেঅত সংখ্যক মানুষকে ভর্তি নেওয়ার জন‍্যে প্রচুর সংখ্যক হাসপাতাল আছে কি১০% মানুষ আক্রান্ত হলেও তার বেড নেই। বর্তমানে ১ কোটি মানুষও করোনায় আক্রান্ত হয়েনিতাতেই চারিদিকে ত্রাহি ত্রাহি রব। আমাদের রাজ‍্যে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে অথচ সরকারি হাসপাতালের পরিকাঠামো অতি করুণ। রোগী বাড়লেওবেড নেই। আর বেসরকারি হাসপাতালে অত টাকার বিল দেওয়ার সামর্থ্য আমাদের কজনের আছেআর যদি ১% মানুষ করোনায় মারাও যান তবে প্রায় ১ কোটি মানুষেরও কিছু বেশি  মানুষ মারা যাবেন। এই এত মানুষের মৃত্যু যাকে বলা যেতে পারে গণমৃত‍্যুতা কি মেনে নেওয়া যায়আর এইসব কারণের জন্যই ভারতে হার্ড ইমিউনিটি এক অলীক স্বপ্ন। তাইবিশেষজ্ঞরা বলছেন করোনার ক্ষেত্রে হার্ড ইমিউনিটি অবাস্তব তো বটেই এমনকি তা অর্জন করার চেষ্টাও এক মহাপাপ


        ফাঁকা ক্লাসরুম থেকে খেলার মাঠবর্তমানে চলা পুজোর মরশুমে পুজোর মণ্ডপ থেকে রাস্তাঘাট। আট থেকে আশি সবার একটাই প্রশ্ন– তাহলেকরোনা থেকে বাঁচতে হলেউপায়টা কিভ‍্যাকসিনকবে আসবে হাতে করোনার ভ‍্যাকসিন?  উত্তর সময়েই জানেসেই যথাসময়ে দেবে।


---------------------*------------------------

  Never miss a story from us, get weekly updates in your inbox.